ক্রাইম প্রতিবেদক: সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ব্যবসা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাত নামলেই গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী রুস্তুমপুর ইউপি সীমান্ত দিয়ে খরস্রোতা নদীর কচুরিপনার মত ভেসে আসতে শুরু করে ভারতীয় কসমেটিকস, গরু-মহিষ ও চিনিসহ নানা চোরাই পন্য।
বঙ্গবীর পয়েন্ট দিয়ে পুলিশ পাহাড়ায় প্রতিদিন রাতের আঁধারে ভারতীয় অবৈধ চিনি, মদ,গরু-মহিষ, কসমেটিকস, ফেনসিডিল, পাথর ও বালুসহ অবৈধ পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিঘ্নে পাচার হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাটের থানা পুলিশের ভুমিকা রয়েছে রহস্যজনক, যার কারণে রাতের আঁধারে সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত থেকে আসা অবৈধ পণ্য ট্রাকে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই সীমান্তবর্তী রুস্তুমপুর ইউপি এলাকায় চোরাচালানীদের অবাধ বিচরণ দেখা মিলে। স্থানীয় জনসাধারণ বলেন, সীমান্ত এলাকার গ্রামের মেঠোপথগুলো চোরাচালানকারীরা নিরাপদ রোড হিসাবে ব্যবহার করে। চোরাচালানিরা এলাকার প্রভাবশালী ও বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি হওয়াতে এলাকার লোকজন ভয়ে কিছু বলতে পারে না। গত ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের জেরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে কিছুদিন বন্ধ ছিল সীমান্তের চোরাচালান। বেশ কিছুদিন যাবৎ থেকে আবারও তৎপরতা শুরু হয়েছে এবং চলছে নতুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাইনম্যান সিন্ডিকেট নিয়োগের তৎপরতা। যার কারনে রাতের আঁধারে সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত থেকে আসা অবৈধ পণ্য ট্রাকে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন জাগায়।
স্থানীয়রা বলেছেন, এসব চোরাচালানে সরাসরি সুযোগ করে দেন গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কনস্টেবল বক্কর।
স্থানীয়দের তথ্য মতে পুলিশ প্রতি চিনির গাড়ি থেকে ১০,০০০ টাকা, মহিষ থেকে ২,০০০ টাকা এবং অন্যান্য মাদক, কসমেটিকস থেকে ১,৫০০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে অল্প দিনে একেকজন হয়ে গেছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে ঐ রাস্তা দিয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী ডিআই পিক-আপ বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং প্রতিনিয়ত রোড এক্সিডেন্টের শিকার হচ্ছেন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের ২ জন ছাত্র এবং সর্বশেষ একজন অজ্ঞাত মহিলা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বারবার চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বললে বিষয়টি কোনভাবেই দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলছেন। যার ফলে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা এই চোরাচালান। মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে চিনিভর্তি গাড়ী, ভারতীয় গরুসহ ডি-আই, পিক-আপ গাড়ী আটকের খবর পাওয়া যায়, কিন্তু আটককৃত গরুর ক্রয়কৃত রশিদ নিয়ে থানায় গেলেও বৈধতা পায় না রশিদটি, ক্রেতা-ইজারদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদেরও দায়সারা জবাব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীমান্তে এলাকা ভিত্তিক একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন করে নিয়োগ দেওয়া হয় লাইনম্যান । ওই লাইনম্যান এক একটি করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। সেই সিন্ডিকেটের কোনো সদস্য বিজিবির গতিবিধি বা অবস্থান লক্ষ্য করেন। বিজিবি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় টহলে গেলেই তারা সীমান্তে গিয়ে মাদক, ভারতীয় গরু, মহিষ, চিনি, কসমেটিকস ও কিটসহ বিভিন্ন আমদানি নিষিদ্ধ পন্য নিয়ে আসে। বিনিময়ে মাদক ও গরু ব্যবসায়ীদের ওই সিন্ডিকেটকে গরু প্রতি কমিশন দিতে হয়। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সেই টাকা তুলে থাকেন কথিত লাইনম্যানরা।
এদিকে গরু ও চিনিসহ অন্যান্য পন্য আনতে গিয়ে ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক ।
এ ব্যাপারে জানতে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনে প্রতিবেদক যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, ফোন ব্যস্ত পাওয়া যায়।
Leave a Reply